ভিত্তিহীন কিসসা ইহুদীর লাশ দেখে নবীজীর আফসোস

 

ভিত্তিহীন কিসসা
ইহুদীর লাশ দেখে নবীজীর আফসোস: যদি আমরা তাকে আগে দাওয়াত দিতাম, তবে সে জাহান্নামী হত না



উম্মতের প্রতি নবীজীর অগাধ দরদ এবং তাদের হেদায়েতের জন্য তাঁর ব্যাকুলতা বর্ণনার সময় কিছু বক্তা একটি বানোয়াট কাহিনী উল্লেখ করেন, যা নিম্নরূপ:

একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সঙ্গে বসে ছিলেন। তখন তাঁর সামনে দিয়ে এক ইহুদীর লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখে নবীজী কেঁদে উঠলেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এটি তো একজন ইহুদীর লাশ। আপনি কেন কাঁদছেন?’

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমরা যদি তাকে আগে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতাম, তবে সে জাহান্নামী হত না।’”



বিশ্লেষণ

উম্মতের হেদায়েতের জন্য নবীজীর ব্যাকুলতা নিঃসন্দেহে বর্ণনাতীত। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং কুরআনে তাঁর এ দরদ ও ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন:

“(হে রাসূল!) তারা ঈমান না আনলে হয়তো আপনি আক্ষেপ করে নিজের প্রাণ বিনাশ করে ফেলবেন।
সূরা কাহফ (১৮:৬)

“(হে রাসূল!) কাফেররা ঈমান আনছে না, এই কষ্টে যেন আপনি আত্মবিনাশী হয়ে না যান।
সূরা শুআরা (২৬:৩)

তাদের জন্য আফসোস করতে করতে যেন আপনার প্রাণ চলে না যায়। আল্লাহ জানেন তারা কী করছে।
সূরা ফাতির (৩৫:৮)

কুরআনের এসব আয়াত নবীজীর উম্মতের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও ঈমান আনার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা তুলে ধরে। তবে উপরোক্ত কাহিনীটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এটি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় না।

সহীহ বর্ণনা

তবে ইহুদীদের দাওয়াত প্রসঙ্গে নবীজীর একটি সহীহ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত,

এক ইহুদী বালক নবীজীর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবীজী তাকে দেখতে গেলেন। তার মাথার কাছে বসে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো।

বালকটি অনুমতির জন্য তার পিতার দিকে তাকাল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের (নবীজীর) কথা মেনে নাও।

এরপর বালকটি ইসলাম গ্রহণ করল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে বের হয়ে বললেন:

আলহামদুলিল্লাহ! যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করলেন।
—[
সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৬]

উপসংহার

ইহুদীর লাশ দেখে নবীজীর কাঁদার কাহিনী বানোয়াট। এর কোনো সনদ বা ভিত্তি নেই। তবে মৃত্যুশয্যায় এক ইহুদী বালককে দাওয়াত দিয়ে তাকে ঈমানের পথে নিয়ে আসার ঘটনা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত।

আমাদের দায়িত্ব হলো নবীজীর জীবনীতে প্রমাণিত ঘটনাগুলোকে তুলে ধরা এবং ভিত্তিহীন কিসসা-কাহিনী থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ আমাদের সত্যের প্রতি প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমীন।

 {মাসিক আল-কাওসার হতে সংগৃত}



আরো পড়ুন

Ø টেকনোলজি তথ্য
Ø  ইসলাম ও বিজ্ঞান
Ø  ইসলামী ইতিহাস
Ø  কুরআন ও তাফসীর
Ø  ভিন্ন ধর্ম

 

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post