প্রশ্নঃ-১
কয়েকদিন আগে আমাদের ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যায়। পরে
আমরা জামাতে ফজরের কাযা নামাজ আদায় করি এবং নামাজে কেরাত জোরে পড়ি। কিন্তু পরে
মনের মধ্যে খটকা লাগে—এভাবে জোরে কেরাত পড়া কি সঠিক হয়েছে?
আরেকটি প্রশ্ন, কাযা নামাজের জন্য নিয়ত কীভাবে করতে হয়? কাযা শব্দ উল্লেখ না করে নামাজ পড়লে কি তা আদায় হয়ে যাবে?
উত্তর
আপনার উল্লেখিত ক্ষেত্রে কেরাত জোরে পড়া সঠিকই
হয়েছে। কারণ ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজের কাযা জামাতে আদায় করলে কেরাত
জোরে পড়া আবশ্যক। দিনের বেলায় আদায় করা হলেও এই নিয়মই প্রযোজ্য।
হাদিস শরিফে এর সমর্থন পাওয়া যায়। ইমাম মুহাম্মাদ
(রহ.) কিতাবুল আছার-এ একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন—
হাদিসের বিবরণ:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
কয়েকজন সাহাবী এক সফরে ছিলেন। রাতে দেরি করে ঘুমানোর কারণে সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে
যান এবং সূর্যোদয়ের আগে জাগতে পারেননি। পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে জামাতে ফজরের কাযা নামাজ আদায় করেন এবং অন্য সময়ের
মতোই কেরাত জোরে পড়েন।
হাদিস:
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: عَرَّسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً... فَصَلَّى الْفَجْرَ بِأَصْحَابِهِ، وَجَهَرَ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ كَمَا كَانَ يُصَلِّي بِهَا فِي وَقْتِهَا.
(কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ১৬৮)
এ বিষয়ে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতও এভাবেই
প্রমাণিত।
কাযা নামাজের নিয়ত
নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। নিয়ত মূলত অন্তরের সংকল্পের নাম। যে নামাজ আদায় করছেন, তা কি বর্তমান ওয়াক্তের নামাজ, নাকি কোনো পূর্বের কাযা নামাজ—এটি অন্তরে ঠিক করলেই যথেষ্ট।
কেউ মুখে উচ্চারণ করতে চাইলে কাযা শব্দ উল্লেখ করাও
জরুরি নয়। বরং এভাবে বলতে পারেন:
- আমি অমুক দিনের নামাজ আদায় করছি।
- আমার যিম্মায় থাকা নামাজ আদায় করছি।
যা-ই বলেন, মনের সংকল্প বা উদ্দেশ্য সঠিক থাকলে
নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র:
1.
আলমবাসুত, ইমাম সারাখসি
(১/১০):
"নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা কোনো বিষয় নয়। তবে কেউ যদি
একাগ্রতা আনার জন্য উচ্চারণ করে, তা ভালো।"
2.
জাওয়াহিরুল
ফাতাওয়া (পৃ. ১০৩):
"নিয়তে কাযা বা আদায়ের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। নামাজ
সময়মতো হলে তা আদায় (অদা) হবে, আর সময়ের বাইরে হলে তা কাযা
হবে।"
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ:
- আলজামিউস সাগীর (পৃ. ৭২)
- ফাতহুল কাদীর (১/২৮৫)
- ফাতাওয়া হিন্দিয়া (১/৬৬, ১২১)।
উপসংহার
১. কাযা ফজরের নামাজে কেরাত জোরে পড়া সঠিক হয়েছে।
২. কাযা নামাজের নিয়ত করার সময় মনের সংকল্পই যথেষ্ট।
মুখে কাযা শব্দ উল্লেখ না করলেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
আরো
পড়ুন