ইয়া সানাম! ইয়া সামাদ!

 

একটি ভিত্তিহীন কিসসা
ইয়া সানাম! ইয়া সামাদ!

লোকমুখে একটি কিসসা বেশ প্রচলিত। বলা হয়

এক ব্যক্তি সত্তর বছর ধরে একটি মূর্তির পূজা করত। সে প্রতিনিয়ত মূর্তিকে উদ্দেশ্য করে বলত, ইয়া সানাম! ইয়া সানাম! অর্থাৎ, "হে মূর্তি!"

একদিন একটি প্রয়োজনে মূর্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বলতে লাগল, ইয়া সানাম! আগিছনী! অর্থাৎ, "হে মূর্তি, আমাকে সাহায্য করো।" কিন্তু মূর্তি তো তার ডাকে সাড়া দিল না। অনেকক্ষণ প্রার্থনার পর ভুলক্রমে তার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, ইয়া সামাদ! আগিছনী! অর্থাৎ, "হে সেই সত্তা, যিনি সকলের মুখাপেক্ষী এবং যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, আমাকে সাহায্য করুন।"

অমনি আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিলেন। গায়েব থেকে আওয়াজ এলোলাব্বাইকা আবদী! অর্থাৎ, "হে আমার বান্দা, আমি উপস্থিত।" এরপর আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন।

ফিরিশতারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলল, "হে আমাদের প্রভু! সে তো আপনাকে ভুলে ডেকেছে। এমনকি তার উদ্দেশ্যও আপনি ছিলেন না। তাহলে কেন আপনি তার ডাকে সাড়া দিলেন?"

আল্লাহ বললেন, "মূর্তি তো তার ডাকে সাড়া দিতে পারে না। আমিও যদি তার ডাকে সাড়া না দিই, তবে আমার আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য কোথায়!"

বিকল্প বর্ণনা

আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়
যখন ব্যক্তি প্রথমবার ভুলে ইয়া সামাদ! বলে আল্লাহকে ডেকেছিল, তখন আল্লাহ বলেন, "বান্দা আমাকে ডেকেছে, তাই আমি তার ডাকে সাড়া দেব এবং তার প্রার্থনা কবুল করব।"

ফিরিশতারা বলল, "হে প্রভু! সে তো আপনার সাথে শিরক করেছে এবং আপনাকে ভুলে ডেকেছে।"

আল্লাহ বলেন, "হোক সে ভুলে ডাক, আমি ছাড়া অন্য কোনো সামাদতো নেই। তাই আমি তার ডাকে সাড়া দেব।"

ঘটনাটি ভিত্তিহীন

এই কিসসাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর উল্লেখ নেই। তবে আবদুর রহমান সাফূরী (রাহ.) তাঁর বই নুযহাতুল মাজালিস-এ এমন একটি ঘটনা সনদবিহীনভাবে উল্লেখ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে

ঘটনার সারাংশ:
এক বৃদ্ধ দীর্ঘদিন মূর্তির পূজা করত। একদিন মূর্তির কাছে প্রার্থনা করেও কোনো সাড়া না পেয়ে, হতাশ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, ইয়া সামাদ! সঙ্গে সঙ্গে গায়েব থেকে আওয়াজ এলো, "হে বান্দা, আমি উপস্থিত।" এরপর সে মূর্তি পূজা ছেড়ে দিয়ে তাওহীদের ওপর ফিরে আসে।

সূত্রের অসারতা

এ ঘটনাটি যে নির্ভরযোগ্য নয়, তার প্রমাণ:

Ø নুযহাতুল মাজালিস একটি অনির্ভরযোগ্য কিতাব, যা বানোয়াট কিসসা-কাহিনীতে ভরপুর।

Ø শামসুদ্দীন সাফূরী (রাহ.) তাঁর আলমাজালিসুল ওয়াযিয়্যাহ-এ উল্লেখ করেছেন যে, এটি কেবল কিসসাকারদের কথার ভিত্তিতে প্রচলিত। তিনি বলেন, نقل الإخباريون... অর্থাৎ, "কিসসাকারগণ নকল করেছেন।"

Ø শায়েখ আবু ইসহাক আলহুওয়াইনী (রাহ.) তাঁর গ্রন্থ ইসআফুল লাবীছ বিফাতাওয়াল হাদীস-এ বলেন,   "এটি নবীজীর নামে বর্ণিত কোনো হাদীস নয়। এটি একটি বাতিল কিসসা।"

সঠিক শিক্ষা

এই কিসসাটি হয়তো একটি প্রতীকী ঘটনা হিসেবে প্রচলিত হয়েছে, তবে এতে বাড়তি কথাও যোগ করা হয়েছে। মূলত, শিরকযুক্ত দুআ বা ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও আল্লাহ দুনিয়াতে অমুসলিমদের দুআও কবুল করতে পারেন, তবে আখেরাতে বিচার ঈমান ও তাওহীদের ভিত্তিতেই হবে।

সুতরাং, এই ধরনের ভিত্তিহীন কিসসা থেকে দূরে থাকা এবং ইসলামের নির্ভরযোগ্য উৎসগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি।

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post