কিছু বক্তাকে হযরত বেলাল রা.-এর নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা
বলতে গিয়ে এই কথাটি উল্লেখ করতে শোনা যায়—
“হযরত বেলাল রা.-কে যখন কাফের নেতারা নির্যাতন করছিল, তখন তাকে জিজ্ঞেস
করা হলো, ‘আপনাকে এত মারার পরেও আপনি কেন ঈমান ত্যাগ করছেন না?’
বেলাল রা. উত্তরে বললেন, ‘যেমনিভাবে তোমরা মাটির হাঁড়ি কেনার সময় তাতে টোকা মেরে পরীক্ষা কর, তেমনি আমার রবও আমাকে মেরে মেরে আমার ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন।
এই কথাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো ভিত্তি নেই।
বেলাল রা.-এর প্রকৃত ঘটনা
ইসলাম গ্রহণের পর হযরত বেলাল রা. অত্যন্ত কঠিন
নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সহীহ হাদীসে এসেছে, তিনি দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিলেন
এবং ইসলামের কারণে তার মনিব উমাইয়া ইবনে খালফ তাকে ভয়াবহ নির্যাতন করত। তাকে
জ্বলন্ত সূর্যের নিচে গরম বালুর ওপর ফেলে রেখে বুকের ওপর ভারী পাথর চাপিয়ে দেওয়া
হতো। তবুও তিনি তার ঈমানের ওপর অটল থেকে একটিই কথা বলতেন—“আহাদ, আহাদ” (আল্লাহ এক, আল্লাহ এক)।
(দ্র. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ১৫০)
কিন্তু নির্যাতনের সময় তিনি “মাটির হাঁড়ি টোকা দিয়ে পরীক্ষা করার” কথা বলেছেন—এমন কোনো কথা নির্ভরযোগ্য হাদীস বা ইতিহাসগ্রন্থে পাওয়া যায় না।
ঈমানের পরীক্ষা প্রসঙ্গে
এ কথা সত্য যে, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার ঈমানের
পরীক্ষা নেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
“মানুষ কি মনে করে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’—এ কথা বললেই
তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদেরকেও আমরা
পরীক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যনিষ্ঠ এবং কারা
মিথ্যাবাদী।”
(সূরা আনকাবূত: ২-৩)
বেলাল রা.-এর উপর নির্যাতনও তার ঈমানের পরীক্ষা ছিল। তবে নির্যাতনের সময় তিনি “মাটির হাঁড়ি পরীক্ষা” প্রসঙ্গে কথা বলেছেন—এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
উপসংহার
ইসলামি ইতিহাসে বেলাল রা.-এর সাহস ও ঈমানের প্রতি অবিচলতার কাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, তার জীবনীতে ভিত্তিহীন ঘটনা সংযোজন করা অনুচিত। সহীহ সূত্রে প্রমাণিত কাহিনী প্রচার করা এবং মনগড়া কথার প্রতি সতর্ক থাকা আমাদের দায়িত্ব।