সুরা মাউন (সূরা ১০৭) এর তাফসীর দলীলসহ তাফসিরঃ
সুরা আল-মাউন হল কুরআনের 107 তম সূরা। এটি মাক্কী সূরা, অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। সুরাটি 7 আয়াত নিয়ে গঠিত। "মাউন" শব্দের অর্থ হলো "ছোট সাহায্য" বা "সহায়ক বস্তু", যেমন দরিদ্রদের জন্য খাবার, পানীয়, বা তাদের অন্যান্য ছোট সাহায্য।
বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ:
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম - আল্লাহর নামে, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
২. অরাইতা আল্লাজি ইউকাযযিবু বিদ্দীন - আপনি কি দেখেছেন
তাকে, যে দ্বীনের কথা মিথ্যা বলে?
৩. ফাজালিকাল্লাজি ইয়াদ্দু'ল ইয়াতীম - সে তো সেই ব্যক্তি, যে এতিমকে ধাক্কা
দেয়।
৪. ওয়ালা ইয়াহুছু 'আলা তালামীল
মিসকীন - আর সে দরিদ্রদের খাবারের প্রতি উৎসাহ দেয় না।
৫. ওয়াইলুল লিল মু'ছাল্লিন - দুর্ভোগ তাদের
জন্য যারা নামাজ পড়ে।
৬. আল্লাজিনাহুম আন সালাতিহিম সাওহুন - যারা তাদের নামাজে
অবহেলা করে।
৭. আল্লাজিনাহুম ইউরাওন - যারা লোক দেখানোর
জন্য কাজ করে।
৮. ওয়া ইয়ামনাঊনাল মাউন - আর যারা ছোট
সাহায্যও দেয় না।
ব্যাখ্যা:
সুরা আল-মাউন মানুষের নৈতিক অবস্থা এবং দ্বীনের প্রতি
অবজ্ঞার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এখানে আল্লাহ একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন, যা সমাজের বিভিন্ন
পক্ষের জন্য একটি সতর্কবাণী।
প্রথম আয়াত - দ্বীন (ধর্ম)কে মিথ্যা বলার এক ধরনের অবজ্ঞা এবং অস্বীকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এটি যারা সত্যকে অস্বীকার করে এবং সমাজে ধর্মের প্রতি নিরাসক্ত থাকে তাদের সম্পর্কে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াত - এটি এমন ব্যক্তির
বর্ণনা দেয়, যে এতিমদের প্রতি নিষ্ঠুর এবং দরিদ্রদের প্রতি উদাসীন।
এটা সমাজে সহানুভূতির অভাব এবং নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র।
চতুর্থ আয়াত - নামাজীদের জন্য
আল্লাহ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, যারা নামাজের মধ্যে অবহেলা করে। এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা নামাজে মনোযোগ দেয় না এবং
নিয়মিতভাবে নামাজ পড়ে না।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ আয়াত - এরা সেই ব্যক্তি যারা লোক দেখানোর জন্য ধর্মীয় কাজকর্ম করে, তাদের মধ্যে সততা এবং প্রকৃত ইবাদতের অভাব রয়েছে।
সপ্তম আয়াত - যারা ছোট সাহায্যও
নিতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়, অর্থাৎ সামাজিক দায়িত্ববোধের অভাব।
এ সুরার মাধ্যমে আল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে সহানুভূতি, সৎ চরিত্র, এবং ধর্মীয় কর্তব্য পালন করার আহ্বান করেছেন। যারা সমাজের দুর্বল সদস্যদের সাহায্য করবে না এবং ধর্মীয় কর্তব্যে অবহেলা করবে, তাদের জন্য আল্লাহর আজাব হতে পারে।