সুরা
আল-কাওছার (সুরা ১০৮) এর
তাফসীর দলীলসহ ব্যাখ্যা
সুরা আল-কাওছার মক্কী সুরা এবং এটি ৩ আয়াতের সংকলন। সুরাটি নবী (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া, রহমত, এবং বরকতের ঘোষণারূপে অবতীর্ণ হয়েছিল। "কাওছার" শব্দটি অত্যন্ত প্রিয় এবং অত্যধিক দান বা অনুগ্রহের প্রতীক, যা আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া এক বিশেষ উপহার হিসেবে বুঝানো হয়েছে।
এখানে
সুরা আল-কাওছারের তাফসীর এবং দলীলসহ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
আয়াত
১:
উচ্চারণ: ইন্না
আতাইনাকাল কাওছার
তর্জমা: "নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাওছার দান করেছি।"
তাফসীর:
v ইন্না (নিশ্চয়ই): এটি
একটি নিশ্চিত ঘোষণা, যেখানে আল্লাহ নবী
(সা.)-এর প্রতি তাঁর বিশেষ দানে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন।
v আতাইনাকা (আমি তোমাকে দিয়েছি): এখানে
আল্লাহ তার বান্দাকে দানের ঘোষণা করছেন। এটি অত্যন্ত বিশেষ দান, যা
বিশেষত নবী (সা.)-এর জন্য।
v কাওছার (কাওছার): "কাওছার" শব্দের মূল অর্থ হলো ‘অত্যন্ত
বেশি, বিরাট উপহার’। এটি বিশেষভাবে একটি নদী বা উৎসের নাম, যা
আল্লাহ তাঁর নবীকে প্রদান করেছেন। কাওছার একটি সরাসরি আল্লাহর দয়া, যা
নবী (সা.)-এর প্রতি তাঁর অনুগ্রহের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
v তাফসীর: সুরা আল-কাওছার আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী (সা.)-এর প্রতি বিশেষ একটি দান বা অনুগ্রহের ঘোষণা। "কাওছার" শব্দটি কেবল একটি নদী বা উৎস নয়, বরং এটি নবী (সা.)-এর জন্য আল্লাহর অগণিত দান এবং বরকতের প্রতীক, যার মধ্যে রয়েছে পৃথিবী ও আখিরাতের সকল ভালো কিছু। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
আয়াত
২:
উচ্চারণ: ফাসল্লি
লিরাব্বিকা ওয়ানহর
তর্জমা: "তাহলে তুমি তোমার পালনকর্তার জন্য প্রার্থনা কর এবং কোরবানি
কর।"
তাফসীর:
v ফাসল্লি (তাহলে তুমি প্রার্থনা কর): এটি
নবী (সা.)-কে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, তিনি
আল্লাহর কাছে পূর্ণ অনুগত থেকে প্রার্থনা করবেন। এটি দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখা যায়।
v লিরাব্বিকা (তোমার পালনকর্তার জন্য): এখানে
বলা হচ্ছে, আল্লাহকে সেবা এবং
পুরস্কৃত করার জন্য। এটি মুসলিমদের জন্য একটি শিক্ষা, যেখানে
তারা তাদের সেবা ও পূর্ণ আনুগত্য আল্লাহর প্রতি নিবেদন করবে।
v ওয়ানহর (এবং কোরবানি কর): "নহর" শব্দটি কোরবানি বা উৎসর্গের সাথে সম্পর্কিত। এটি
নবী (সা.)-কে নির্দেশ করা হচ্ছে যে, তিনি
আল্লাহর পথে উৎসর্গ ও কোরবানি করবেন, যা
মুসলিমদের জন্য একটি নির্দেশনা।
v তাফসীর: এই আয়াতে নবী (সা.)-কে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং দানের বিনিময়ে তার সেবা ও আনুগত্য নিবেদন করার জন্য বলা হচ্ছে। এখানে কোরবানি দিয়ে আল্লাহর পথে পুরস্কৃত হওয়ার এবং তার কাছে সমর্পণ করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
আয়াত
৩:
উচ্চারণ: ইন্না
শানিআক হুয়া আবতার
তর্জমা: "নিশ্চয়ই, তোমার
শত্রুই হলো বংশহীন।"
তাফসীর:
v ইন্না (নিশ্চয়ই): এটি
একটি নির্দিষ্ট ঘোষণা যে, শত্রুদের কথা সত্য
নয় এবং তাদের শেষ অবস্থা হবে অপূর্ণ।
v শানিআক (তোমার শত্রু): "শানিআক" শব্দটি শত্রু বা বিরোধীকে বোঝায়। এই শত্রুদের
উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে যে, তারা নবী (সা.)-এর
বিরোধিতা করছে।
v হুয়া (সে): এই
শব্দটি শত্রুদের দিকে নির্দেশিত। আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছেন যে, যারা
নবী (সা.)-এর প্রতি শত্রুতা করছে, তারা
শেষপর্যন্ত বংশহীন হবে।
v আবতার (বংশহীন): "আবতার" শব্দটি ‘বংশহীন’ বা ‘বাচ্চাহীন’ মানুষকে
বোঝায়, যার দ্বারা এখানে বলা হচ্ছে যে, নবী
(সা.)-এর শত্রুদের কোনো দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার বা বংশের ধারাবাহিকতা থাকবে না।
v তাফসীর: এই আয়াতে আল্লাহ নিশ্চিত করেছেন যে, যারা নবী (সা.)-এর শত্রু, তাদের শেষ পরিণতি হবে খুবই নিকৃষ্ট। তাদের বংশ বৃদ্ধি হবে না, এবং তাদের ঐতিহ্য মুছে যাবে। এটি নবী (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ সহানুভূতির প্রতীক, যেখানে আল্লাহ তাঁর শত্রুদের অপমানিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। (তাফসীর আল-জালালাইন)
সুরা আল-কাওছারের সারাংশ:
সুরা আল-কাওছার একটি মহান দান ও আশীর্বাদ সম্পর্কিত সূরা। এই সুরা নবী (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ দানের ঘোষণা প্রদান করে, যেখানে আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে "কাওছার" নামে এক বিরাট উপহার প্রদান করেছেন। এটি একটি নদী বা উৎসের নাম হলেও, এর মধ্যে আল্লাহর অসীম দয়া এবং রহমতের প্রতীক রয়েছে।
এছাড়া, নবী
(সা.)-কে তাঁর পালনকর্তার প্রতি আনুগত্য এবং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে প্রার্থনা ও
কোরবানি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছেন যে, তারা
বংশহীন হবে এবং তাদের ঐতিহ্য সম্পূর্ণরূপে মুছে যাবে।
এই সুরা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, তারা কখনও আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বিচ্যুত হবে না এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, ঠিক যেমন নবী (সা.) করেছেন।
আরো
পড়ুন
Ø টেকনোলজি তথ্য
Ø ইসলাম ও বিজ্ঞান
Ø ইসলামী ইতিহাস
Ø কুরআন
ও তাফসীর
Ø ভিন্ন ধর্ম