সুরা আত-তাকাসুর বাংলা উচ্চারন , অর্থ ও ব্যখ্যা

 

সুরা তাকাসূর (সূরা ১০২)

 

সুরা আত-তাকাসুর বাংলা উচ্চারন , অর্থ ও ব্যখ্যা



সুরা তাকাসূর এর তাফসীর, দলীলসহ ব্যাখ্যা:

আয়াতঃ-১ 

"আলহাকুমুত তকাসূর"

অর্থ: তোমাদেরকে ভিন্ন করে দিয়েছে প্রতিযোগিতা।

ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ্ মানুষের প্রতি একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন যে, ধন-সম্পদ এবং আভিজাত্য অর্জনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনোযোগ এতটাই বিভ্রান্ত করে দিয়েছে যে তারা আখিরাতের কথা ভুলে গেছে। "তকাসূর" শব্দের অর্থ হচ্ছে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা, বিশেষত সম্পদ ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ। এই ধরনের প্রতিযোগিতা মানুষকে সত্য এবং ভাল কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যর্থ করে দেয়।

দলীল:
অতঃপর তোমরা পৃথিবী ও আখিরাতের মধ্যে যা সংগ্রহ করেছো, তা তোমাদের জন্য কঠিন হবে। (সূরা আল-হাদিদ, আয়াত
20)

আয়াত ২: 
"হত্তা জুর্তুমুল মাকাবির"
অর্থ: তোমরা কবরস্থান পর্যন্ত পৌছেছিলে।

ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ্ মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তারা এমন একটি সময় পর্যন্ত পৃথিবী ও সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের মধ্যে মগ্ন থাকে, যে সময় তারা মৃত্যু ও কবরের বিষয়টি ভুলে যায়। এটি তাদের ধন-সম্পদের প্রতি মত্ততার চিত্র তুলে ধরে। আল্লাহ্ তাঁদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, একসময় তাদেরকে কবরস্থানে যেতে হবে, কিন্তু সেই সময়ের আগ পর্যন্ত তারা পৃথিবী সংক্রান্ত সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে।

দলীল:
কেউ জানে না যে সে কখন মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা আল-জুমার, আয়াত 42)

আয়াত ৩: 
"কল্লা সওফা তআলামুন"
অর্থ: না, তোমরা শিগগিরই জানবে।

ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, "না" অর্থাৎ তারা যারা দুনিয়া ও সম্পদ সংগ্রহে মগ্ন, তারা জানবে না যে আখিরাতের ক্ষতি কত বড় হবে। আল্লাহ্ এই শব্দ দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাদের মনের মধ্যে যে ভুল ধারণা রয়েছে তা একদিন চূর্ণ হবে। এবং তারা শীঘ্রই বুঝতে পারবে যে তাদের এই অহংকার ও আকাঙ্ক্ষার ফলাফল কি হতে চলেছে।

দলীল:
যারা কেবল পৃথিবী ও ধন-সম্পদে ব্যস্ত থাকে, তারা একদিন বুঝতে পারবে যে তারা ভুল করেছে। (সূরা আত-তাকাসূর, আয়াত
6)

আয়াত ৪:
"থম্মা কল্লা সওফা তআলামুন"
অর্থ: তারপর, তোমরা শীঘ্রই জানবে।

ব্যাখ্যা:

এ আয়াতে পুনরায় বলা হচ্ছে যে, পৃথিবী ও ধন-সম্পদের প্রতি অযথা আগ্রহী ব্যক্তিরা অবশেষে বুঝতে পারবে যে তাদের এসব আগ্রহের কোনো মূল্য নেই। এই আয়াতে আল্লাহ্ পুনরায় মানুষকে আখিরাতের দিকে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করেছেন।
যে কাজ তোমরা করো, তার ফল একদিন তোমরা দেখতে পাবে। (সূরা আল-হাদিদ, আয়াত 11)


আয়াত ৫: 
"কল্লা লাও তআলামুন ইলমাল ইয়াকীন"
অর্থ: না, যদি তোমরা জানতেও পেত, নিশ্চিত জ্ঞান।

ব্যাখ্যা:

এ আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, যদি তারা সত্যিকারের জ্ঞান পেত, তবে তারা জানতো যে ধন-সম্পদ এবং দুনিয়াবী বিষয়গুলি কতটা অস্থায়ী এবং অমূল্য। এখানে "ইলমাল ইয়াকীন" (নিশ্চিত জ্ঞান) শব্দটি নির্দেশ করে যে, যদি মানুষ আখিরাতের জ্ঞান এবং এর বাস্তবতা জানতো, তবে তারা দুনিয়া ও সম্পদের প্রতি এই অতিরিক্ত আকর্ষণ অনুভব করত না।
যদি তারা জানত যে, আখিরাতই আসল জীবন, তারা দুনিয়ায় অতিরিক্ত ভোগ বিলাস করতো না। (সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত 64)


আয়াত ৬: 
"লাতারাওনাল জাহীম"
অর্থ: তোমরা অবশ্যই জাহান্নামকে দেখতে পাবে।

ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, যেসব মানুষ দুনিয়াবী জিনিসের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণী হয়ে পড়ে এবং আখিরাতের দিকে নজর দেয় না, তারা একদিন জাহান্নামের শাস্তি দেখতে পাবে। এটি একটি সতর্কবার্তা, যা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে, তাদের কর্মের ফল আখিরাতে ভোগ করতে হবে।

দলীল:
অবশ্যই যে কেউ তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে। (সূরা জুমার, আয়াত 9)

আয়াত ৭: 
"থম্মা লাতারাওনাহা আইনা ইয়াকীন"
অর্থ: তারপর তোমরা তা নিশ্চিত চোখে দেখবে।

ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ্ আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তারা শুধু শুনে নয়, বরং নিজেদের চোখে দেখে বুঝবে। অর্থাৎ, তারা যেসব কর্ম করেছে তার ফলাফল তারা চোখে দেখবে, আর তখন তাদের জন্য কোনো রেহাই থাকবে না।

দলীল:
এমন শাস্তি হবে, যা চিরকাল তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। (সূরা আল-লাহাব, আয়াত 5)

আয়াত ৮: 
"থম্মা লাতুস্'আলুন ইয়াওমাএদিন আনিন নাঈম"
অর্থ: এরপর, সে দিন তোমরা সব নিয়েই জিজ্ঞাসিত হবে।

ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, মানুষ একদিন সব কিছুর জন্য জিজ্ঞাসিত হবে, বিশেষত তার জীবনে যে সমস্ত স্বাচ্ছন্দ্য, সম্পদ, সুবিধা এবং সুযোগ ছিল, তার ব্যবহারের জন্য। এটি তাদের কর্মের ফলাফল হিসেবে হবে। এই প্রশ্নের সময় তাদের জীবন, কাজ এবং তাদের ব্যবহৃত ধন-সম্পদের হিসাব নেবে।

দলীল:
তোমরা যে উপকরণ পেয়েছো, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা আল-দাহর, আয়াত 3)


উপসংহার:

সুরা তাকাসূর মানুষের প্রতি একটি শক্তিশালী সতর্কবার্তা, যেখানে তাদের দুনিয়া এবং সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে। মানুষ যদি আখিরাতের বাস্তবতা উপলব্ধি করত, তবে তারা কেবল পৃথিবী ও ধন-সম্পদের পেছনে দৌড়াত না। এটি আমাদেরকে সঠিক পথে চলার জন্য, আখিরাতের চিন্তা ও প্রস্তুতি গ্রহণের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।

 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post